কালিহাতী (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপনকে কেন্দ্র করে নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ও গভর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিক্ষকদের পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিষ্ঠানটি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন শুধু মাইক বাজিয়ে দায়সারাভাবে পালনের উদ্যোগ নেন অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা। এ ব্যাপারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম দিবসটি প্রতি বছরের ন্যায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে অধ্যক্ষ উত্তেজিত হোন, রাজি না হয়ে অধ্যক্ষ শিক্ষকের সাথে বাদানুবাদ করেন, এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে নাকে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে এবং উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকে, সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম ছাড়াতে গেলে তাকেও অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা কিলঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। এ সংবাদ পেয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের পক্ষ হয়ে শিক্ষকদের গালমন্দ করতে থাকে এবং সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম ও মো. সাকিবকে কিলঘুষি মেরে আহত করে। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত হয়ে উক্ত অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে তারা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং শিক্ষকদের মারপিটের বিচার চায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা একত্রিত হয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের বাড়িতে যায়। তাকে না পেয়ে তারা তাঁর সহধর্মিনী রেখা আক্তারের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন এবং অবিলম্বে অধ্যক্ষের বহিষ্কার এবং গভর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদের বিচার চায়।
বিক্ষুদ্ধ অভিবাবক ও স্থানীয় জনগণকে কলেজ ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে এসময় সনদপত্র জালিয়াতি করে অধ্যক্ষ হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়। অনেক দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ৭ই মার্চকে কম গুরুত্ব দেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে আহত সহকারি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, “অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) নির্বাচনী এলাকার ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলীর ছোট ভাই বিএনপি ও জামায়াতের দোসর। প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ মার্চ পালিত হলেও এবার তিনি দায়সারাভাবে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন, এর বিরোধিতা করায় তিনি আমাকে মারপিট করেন।”
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা ও গভর্নিং বডির সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদের হাতে আহত সহকারি শিক্ষক আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের জানান, “ অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা যখন নজরুল স্যারকে মারতেছিলেন তখন আমি ছাড়াতে গেলে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে কিলঘুষি মারেন। পরে অধ্যক্ষ গভর্নিং বডির সদস্য শুকুর মাহমুদকে ডেকে আনলে তিনি এসেই কোন কিছু বোঝার আগেই আমাকে এবং সহকারি শিক্ষক সাকিবকে মারপিট করেন। আমরা শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির কাছে গিয়েছিলাম। তাকে না পেয়ে তার সহধর্মিনীর কাছে বিচার দিয়ে এসেছি। আমরা অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-শিক্ষক.কর্মচারী সকলেই এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত গভর্নিং বডির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদের মুঠো ফোনে চেষ্ঠা করলে তার সহধর্মীনী ফোনটি রিসিভ করে পরে ফোন দিতে বলে।”
এ ব্যাপারে নারান্দিয়া টিআরকেএন স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি আমি জেনেছি। ঘটনাটি যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সে জন্য আমি ব্যবস্থা নিবো।”
Discussion about this post