পারফরম্যান্স র্যাংকিংয়ে অ্যাওয়ার্ড পেল দেশের ৭৬ কলেজ। মানসম্মত পাঠদান ও শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে অবদান রাখায় এই পুরস্কার দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আগে বলা হতো এটা মাল টানা রেলগাড়ির মতো। কিন্তু এখন এটি সম্পর্কে বলা হয়, দ্রুতগামী আন্তঃনগর ট্রেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই যে অগ্রযাত্রা সেটি অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।
সকালে আয়োজিত ‘কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং ২০১৬ ও ২০১৭’ অ্যাওয়ার্ড ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। বিশেষ অতিথির বত্তৃদ্ধতা করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যেসব কলেজ আছে সেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় মানে শিক্ষা লাভ করতে পারে সে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেকটি বিভাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস করা যায় কিনা সেটি নিয়েও পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা লাভ করতে পারবে। তিনি শিক্ষকদের শুধু চাকরির মানসিকতা নিয়ে পাঠদান না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকদের দায়িত্ব নিয়ে পাঠদান করতে হবে। শুধু চাকরি হিসেবে কাজ করলে হবে না। বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায়ও শিক্ষা দান করা যায়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ লাখ শিক্ষার্থী। এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আগে অনেক নেতিবাচক তথ্য আমরা জানতাম। কিন্তু বর্তমান ভিসির নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় আজকে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিষয়ে মৌলিক বই রচনা করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে নোট-গাইডের বেশ প্রাধান্য। সেটি রোধ করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরব্যাপী কোনো না কোনো পরীক্ষা হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়। তাই শুধু পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। যেখানে শুধু পরীক্ষাই হবে। অন্য কিছু নয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল সেশনজট নির্মূল করা। দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেই সেশনজট দূর করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাতে সারা বছরের ভর্তি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশসহ একাডেমিক সব কার্যক্রমের অগ্রিম দিন-তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সেটি অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সেরার পুরস্কার পেল যেসব প্রতিষ্ঠান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭১৮টি স্নাতক (সম্মান) পাঠদানকারী কলেজের মধ্যে জাতীয় ভিত্তিক ৩১টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে নম্বর দিয়ে সেরা কলেজ নির্বাচিত করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭ সালের সেরা পাঁচ কলেজ, একটি সেরা মহিলা কলেজ, একটি সেরা সরকারি কলেজ ও একটি সেরা বেসরকারি কলেজের নাম ঘোষণা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক ১০টি করে সেরা কলেজের নামও ঘোষণা করা হয়। তবে বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে অংশগ্রহণকারী কম থাকায় ১০টি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি।
শনিবার বিজয়ী কলেজগুলোকে অ্যাওয়ার্ড, সনদ ও চেক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
দেশসেরা পাঁচটি কলেজ হচ্ছে-
রাজশাহী কলেজ, বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, বগুড়ার সরকারি আযীযুল হক কলেজ, পাবনার সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ ও রংপুরের কারমাইকেল কলেজ।
জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ হচ্ছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, সেরা সরকারি কলেজ রাজশাহী কলেজ, সেরা বেসরকারি কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ।
ঢাকা অঞ্চলের সেরা দশ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে
ঢাকা কমার্স কলেজ,টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ, ঢাকার তেজগাঁও কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেরা
কুমিল্লার সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফেনী সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম হাটহাজারী কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ।
রাজশাহী অঞ্চলে সেরা
রাজশাহী কলেজ, বগুড়া সরকারি আযীযুল হক কলেজ, পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ, রাজশাহী ভবানীগঞ্জ কলেজ, বগুড়া সৈয়দ আহমদ কলেজ, সিরাজগঞ্জ হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম কলেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, রাজশাহী দাওকান্দি কলেজ, রাজশাহী কোর্ট কলেজ ও নাটোর এনএস সরকারি কলেজ।
খুলনা অঞ্চলে সেরা
সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজ, যশোর সরকারি এমএম কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, সাতক্ষীরা সীমান্ত আদর্শ কলেজ, যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ, আলমডাঙ্গার এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজ, সাতক্ষীরা কুমিরা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, খুলনার খানজাহান আলী আদর্শ কলেজ ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজ।
বরিশাল অঞ্চলে সেরা
সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ভোলা সরকারি কলেজ। সিলেট অঞ্চলে সেরা কলেজ হচ্ছে সিলেটের এমসি কলেজ, দক্ষিণ সুরমা কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেট মদনমোহন কলেজ ও মৌলভীবাজার সরকারি শ্রীমঙ্গল কলেজ।
রংপুর অঞ্চলে সেরা
কারমাইকেল কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট উত্তরবাংলা কলেজ, লালমনিরহাট হাতিবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজ, রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, দিনাজপুর কেবিএম কলেজ। ময়মনসিংহে সেরা কলেজ হচ্ছে সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, জাহানারা লতিফ মহিলা কলেজ, মুমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, জামালপুর ইসলামপুর কলেজ, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ ও কৃষ্ণপুর হাজী আলী আকবর পাবলিক কলেজ।
Discussion about this post