ক্রীড়া প্রতিবেদক: নানা প্রতিকূলতা মাঝেও এগিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের বয়সভিত্তিক প্রমীলা ফুটবল দল।সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, পারিবাবিক বাধা, অর্থনৈতি প্রতিকুলতা কোন কিছুই দমিয়ে রাখেতে পারেনি সেলিনা আক্তার ঝুমুর, রিতু আক্তার সহ টাঙ্গাইল বয়সভিত্তিক প্রমীলা ফুটবল দলের ১৭ জন খেলোয়ারকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুনেসা ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে তাদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। তারপর ধীরে ধীরে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। সাফল্যও কম আসেনি তাদের। ২০১৬ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৭ সালে রানার-আপ হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে যুব গেমসে অনুর্দ্ধ-১৭ ফুটবলে দেশ সেরা হয়েছে টাঙ্গাইল। অনুর্দ্ধ-১৪ ফুটবলে এই প্রমীলা দল ২০১৮ মালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টাঙ্গাইলের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে তারা।
এই প্রমীলা ফুটবল দলের দলনায়ক হচ্ছে পৌর এলাকার সন্তোষের রিতু আক্তার। বাবা দিন মুজুর।তার দুই সন্তানের মধ্যে রিতু ছোট্র । দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ, তারপর খেলাধুলার সমগ্রী কেনা অনেক খরচের ব্যাপার। কোন রকমকে চলে তাদের পরিবার। তবুও কমতি নেই তার ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার। প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে সে, আশা একদিন জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলে পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতা ঘুচাবে। এ ছাড়া সখীপুর থেকে টাঙ্গাইল এসে ফুটবলের টানে নিয়মিত অনুশীলন করে শান্তা, সোনিয়া, রুপা। ঘাটাইলের লাকি আক্তার, লিজা, লাবনী, ঝুমুর। নাগরপুর থেকে আসে ইতি আক্তার, করটিয়া থেকে সীমা, রোমানা, টাঙ্গাইল সদরের সাবিনা, মারিয়া সুলতানা। তাদের বাসস্থানের কোন প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই । নিজেরাই ভাড়া নিয়েছেন শহরের বেড়াডোমা এলাকায় একটি কক্ষ। সেই খানেই গাড়াগাড়ি করে কোন রকমে থাকা। এ অবস্থায় রুপা আক্তারের পরিবার রুপাকে এখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল । অনেক বুঝিয়ে রুপাকে আবার অনুশীলনে ফিরিয়ে আনা গেছে। এর বিপরীত চিত্রও আছে, টাঙ্গাইল দলের সহ-অধিনায়ক সেলিনা আক্তারের মা সামছুর নাহার বলেন, বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলে আগ্রহী হয় আমার মেয়ে। আমি তাকে সব সময় সাহায্য করি। আমি চাই নানাবিধ প্রতিকুলতার মধ্যেও সেলিনা ভালো এক জন ফুটবল খেলোয়ার হোক।
এই সব প্রমীলা ফুটবলাদের মায়ের মমতায় আগলে রেখেছেন কামরুন্নাহার খান মুন্নী।তিনি পেশায় এক জন শিক্ষক। উত্তরন শিশু শিক্ষালয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন তিনি। ফুটবলের টানে শিক্ষকতার পাশাপাশি এই সব মেয়েদের দেখাশুনা করেন । খেলা শেখান।অদম্য সাহসী মুন্নী প্রচলিত ধারার বিপরীতে লড়ছেন একাই। তিনি বলেন, ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবলের মাধ্যমে প্রথম ফুটবল অঙ্গনে আসা। কিন্ত ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘ দিনের। বড় ভাই ফুটবল খেলতেন । তারও প্রচন্ড ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হবার । কিন্ত সামাজিক কারনে পারিনি। তিনি আমৃত্যু ফুটবলের সাথে জড়িয়ে থাকতে চান। এই খেলার মাধ্যমেই বাল্য বিবাহ রোধ করতে চান।
২০১১ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা ফুটবল টুর্নামেন্ট। টাঙ্গাইলে এই প্রমীলা ফুটবলাদের অধিকাংশ খেলোয়ারই এসেছে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয় আয়োজিত বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে। তাই প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে মধ্যে পড়ে তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দেবার এবং তাদের রক্ষনাবেক্ষন করার । এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে খেলোয়ার বের করে আনা। তারা যেহেতু পঞ্চম শ্রেনীর পর আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতায় থাকে না সে ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে আর সাহায়্য করা সম্ভব হয় না। এর পর দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষা মন্ত্রনালয় তথা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের।
Discussion about this post