কারকনিউজ ডেস্ক : পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। ভাড়াটিয়াদের বেশিরভাগ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। দ্বিতীয় দিনের মত শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি)এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।ফলে স্থায়ী বাসিন্দারা রয়েছেন মহা সংকটে। গত দুই দিন ধরে চকবাজারের চুড়িহাট্টা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুত বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুত না থাকায় পানিও পাচ্ছেন না এলাকার লোকজন। একারণে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতেছেন তারা। রান্নাবান্না না করতে পেরে তারা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।
রেস্টুরেন্টও দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। চকবাজার এলকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম বলেন, আগুনের ঘটনার পর থেকেই এলাকায় কোথাও গ্যাস নাই। বিদ্যুত এবং পানিরও একই অবস্থা। যারা ভাড়াটিয়ারা বেশিরভাগই অন্যত্র এবং গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আমরা যারা স্থায়া বাসিন্দা তারা আছি বিপদে আছি। কবে নাগাদ এ সমস্যা সমাধান হবে তা জানি না।
এদিকে, শুক্রবার সকালে চুড়িহাট্টার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এ যেন ভস্মীভূত জনপদ। রাস্তায় ময়লার স্তূপের মতো পুড়ে কয়লা হয়ে আছে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল। পুড়ে বাদামি হয়ে গেছে গাড়িগুলো। রাস্তাজুড়ে কেমিক্যালের বোতল, প্লাস্টিকের পণ্য। দেয়াল ভেঙে ধসে পড়া ক্রংক্রিটের টুকরো। আগুনে কালো হয়ে গেছে ভবনগুলো। ঘটনাস্থলের শাহী মসজিদ ছাড়া প্রায় পাঁচটি ভবনেরই একই অবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সদস্যরা।
এলাকাবাসী জানান, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার কারণ ছিল গ্যাস সিলিন্ডার ও কেমিক্যাল। রাজ্জাক ভবনের নিচতলায় ছিল সিলিন্ডারের দোকান। এছাড়াও দুটি রেস্টুরেন্টে ছিল ছয়টি সিলিন্ডার। আব্দুল ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় ছিল প্লাস্টিকের স্যান্ডেলের কারখানা। দ্বিতীয় তলায় ছিল গ্যাস, পারফিউম এর মজুত। সেখানে বডি স্প্রে তৈরি করা হতো।
অন্যদিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য কোনো ধরনের অনুমতি ছিলো না।এমনকি ওই এলাকায় নিমতলী ট্র্যাজিটির পর কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ বিস্ফোরক পরিদফতরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
পরিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক শামসুল জানান, নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ওই এলাকায় কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য একটি লাইসেন্সও দেয়া হয়নি। ওই এলাকায় বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্সধারী কোনো গুদামও নেই। যে ভবনটিতে আগুন লেগেছিল সেটিতেও রাসায়নিক দ্রব্য ও দাহ্য পদার্থ রাখার অনুমতি ছিল না।
কেমিক্যালের কারনে আগুনের ভয়াবহতা বেশি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্লাস্টিক দানার আগুনও খুব ভয়াবহ হয়। যেখানে প্লাস্টিক ফাইবার, পারফিউম বা শত শত স্প্রে থাকে, সেখানে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে, বিস্ফোরক পরিদফতর রাসায়নিকের গুদাম করার ক্ষেত্রে অনুমতি দিলেও প্লাস্টিক বা রাবারের কারখানা করার ক্ষেত্রে কোনো অনুমতি লাগে না।
বিস্ফোরক পরিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষ পুড়ে নিহত হবার ঘটনার পর উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ মজুতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো। তারপরেও চকবাজারে যে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে সেটি উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের কারণেই।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবনে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও আবারও বেড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ করে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। উদ্ধার অভিযান চলে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এ ঘটনায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হন। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে যে নয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন, তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
Discussion about this post