কারকনিউজ ডেস্ক : আগাম কোনো নোটিশ ছাড়াই রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস লিমিটেড। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলা জ্বালাতে গিয়ে অনেকে জানতে পেরেছেন গ্যাস না থাকার বিষয়টি। এরপর নাস্তা করতে হোটেলে গিয়েও আরেকবার ব্যর্থ হতে হয়েছে অনেককেই।
তেমনই একজন রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসিন্দা মো. হাসান। তিনি বলেন, সকালে নাস্তার জন্য হোটেলে গিয়ে খাবার পাইনি। কোনো হোটেলে খাবার শেষ, আবার কোনটাতে উপচেপড়া ভিড়সহ দীর্ঘ সারি। পরে বাধ্য হয়ে শুকনো খাবার কিনে ঘরে ফিরতে হয়েছে। শুধু সকালেই নয়, দুপুরেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দাদের।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ‘ক্যাফে বাগদাদ’ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার দোলন জানান, সারা দিনের জন্য রান্না করা খাবার দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। শুধু তার হোটেলেই নয়, আশপাশের বিভিন্ন হোটেলেও একই অবস্থা। দোলন বলেন, দুপুর ২টার আগেই সব খাবার শেষ। অনেক মানুষ খাবার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। একটার পর একটা হোটেলে ঘুরেও প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছেন না তারা।
লালবাগ বিরিয়ানী হাউসে আসা তানজিনা জান্নাত নামে এক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলার কোনো মানে হয় না। সকালে গ্যাস থাকবে না, এটা রাতে জানিয়ে দিলেই সবাই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতো। এ ছাড়াও সকাল থেকে গ্যাস না থাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার ভিড় দেখা যায় রাজধানীর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকা বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীর আজিমপুরের একটি সিলিন্ডারের দোকানে দেখা যায়, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন নারী-পুরুষ। শেষ পর্যন্ত সিলিন্ডার নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন কিনা সংশয় তাদের চোখে মুখে।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য আশুলিয়া ও আমিনবাজার সিজিএস প্ল্যান্ট হতে তিতাসের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর, পাইকপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, রিং রোড, মনসুরাবাদ, কাদিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানম?ন্ডি, আজিমপুর, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এসব এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। খাবারের দোকানে সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের খাবারের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সুযোগ বুঝে খাবারের দোকানীরাও চড়া ম‚ল্য হাঁকাচ্ছেন। এছাড়া অনেক দোকান আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিতে পারছেন না। এমন ভোগান্তিতে পড়ায় রাগে ক্ষোভে ফুঁসছেন নগরবাসী। তাদের এই রাগ ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু তিতাস গ্যাস লিমিটেড।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে, তা তিতাসের মাধ্যমে জানেননি। সকালে চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করা হলে দেখা যায় গ্যাস নেই। পরে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে তিতাস গ্যাস। তারা আরও বলছেন, কোনো ধরনের আগাম নোটিশ বা মাইকিং ছাড়া এভাবে গ্যাস বন্ধ করে দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছে তিতাস। এর কারণে সবাই বিপাকে পড়েছেন। দোকানেও খাবার পাওয়া যাচ্ছেন না। আর যেসব দোকানে খাবার বা পানি পাওয়া যাচ্ছে দাম চাচ্ছে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
রাজধানীর মিরপুর-৩-এর বাসিন্দা একটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিনহাজুল তালুকদার বলেন, ‘সকাল ৯টায় রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে দেখা যায় গ্যাস নেই। পরে তিতাস গ্যাসে ফোন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি জানা যায়। কিন্তু গতকাল শনিবার এলাকায় গ্যাস বন্ধের মাইকিং হয়নি। আগাম নোটিশ ছাড়া গ্যাস বন্ধের কারণে সকাল থেকেই অনেক ভোগান্তিতে আছি।’
ধানমন্ডি-১৫ নম্বরের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সকাল থেকে গ্যাস না থাকায় বাসায় কোনো রান্নাবান্না হয়নি। আর বাসার আশপাশেও কোনো খাবারের দোকান নেই। সব মিলিয়ে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছি। সকালে কলা-রুটি খেয়ে অফিসে আসতে হয়েছে আর বাচ্চাদের টিফিন ছাড়াই স্কুলে পাঠাতে হয়েছে।’
পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা রাব্বী বলেন, ‘সকাল থেকে গ্যাস নেই তা দেখে মাথায় হাত। পরে দোকানে খাবার কিনতে গিয়ে আবারও চরম ভোগান্তি। প্রতিটি খাবারে দোকানিরা ১০-১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দোকানিরা বলছেন, এ দামে নিলে নেন না হলে চলে যান।’ আরও বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিতাস গ্যাসের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। তারা এর আগেও একাধিকবার এমন আচরণ করেছে। গ্রাহকদের আগাম কোনো সতর্কতা ছাড়াই তারা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
এর ফলে গ্রাহকদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে তিতাস গ্যাসের পক্ষে থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হচ্ছে, তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকায় তারা আগাম নোটিশ দিতে পারেনি। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের অপারেশন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘সমস্যাটি আমাদের নয়। সমস্যা হচ্ছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল), তাদের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় তারা আমদের গ্যাস দিতে পারছে না। আর সমস্যাটি এতো দ্রুত ঘটে যাওয়ায় আমরাও গ্রাহকদের সময় মতো জানাতে পারেনি।
Discussion about this post