ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের ৬২ বছর পূর্তি আজ। ১৯৫৭ সালের ৯-১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কাগমারীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুই দিনব্যাপী ‘পাকিস্তান সাংস্কৃতিক সম্মেলন’। এ সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক।
আর এ সম্মেলনেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে দলের দুই শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানীর মধ্যে মতবিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। ইঙ্গো-মার্কিন জোটের বাইরে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে ভাসানী অনড় থাকেন। পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে মওলানা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি পূর্ব পাকিস্তানকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে সেদিন বেশি দেরি নেই যেদিন পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানাবে। তার এই ঘোষণায় শাসকশ্রেণির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
যা পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট (হক-ভাসানী) তৎকালীন পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণ মানুষের ব্যাপক সমর্থনে বিজয়ী হয়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রদান করে। তার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বাংলা ভাষার প্রাধান্য ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা। মওলানা ভাসানী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং গণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সংঘটিত আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫১ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকার বার কাউন্সিল লাইব্রেরিতে সন্ধ্যা ৬টায় মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে নেতাকর্মীদের সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যে আন্দোলন হয় সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বরকত, রফিক, জব্বার, সালাম, শফিক, আউয়াল। আহত হয় বহু ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। ১৯৫৩ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
Discussion about this post