কারকনিউজ ডেস্ক : নীলফামারীর সৈয়দপুরে নিজের ভেড়ার খামার থেকে স্বামী ও স্ত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকাল ১১টার দিকে সৈয়দপুর উপজেলার খাতা মধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন খামার মালিক শেখ নজরুল ইসলাম (৬৫) ও তার স্ত্রী সালমা খাতুন (৪৮)। তাদের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের সোনাপুকুরে। এছাড়া আহত খামারের নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে (৪০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট গ্রামের খয়রাত হোসেনের ছেলে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খামারের জমির মালিক আসলাম চৌধুরী (৬০), তার দুই ছেলে সজল (৩০) ও লাবু (৪০), কাজের মেয়ে রহিমা বেগম (৩৫) ও প্রতিবেশী রশিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নজরুল ইসলাম দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে নিয়ে সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। নজরুল ইসলাম দুই বছর আগে স্থানীয় আসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে ২ একর জমি লিজ নিয়ে খাতা মধুপুর এলাকায় গরু-ছাগল ও ভেড়ার খামার গড়ে তোলেন। এই দম্পতি মাঝেমধ্যে এই খামারে থাকতেন। চার দিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে খামার দেখতে এসেছিলেন নজরুল।
নিহত দম্পতির ছেলে শেখ স্বপন আহমেদ (২২) জানান, চার দিন আগে বাবা-মা খামার বাড়িতে যান। রোববার সকাল সোয়া ৭টার দিকে মায়ের মোবাইল থেকে গ্রামের এক লোক তাদের কুপিয়ে হত্যার খবর জানান। পরে বড় ভাইকে নিয়ে খামার বাড়িতে এসে দেখি— বাবা-মায়ের লাশ পড়ে আছে। রক্তাক্ত আব্দুর রাজ্জাক কাতরাচ্ছেন।
তিনি জানান, খামারের জমির মালিক আসলাম চৌধুরীর ছেলেরা কিছুদিন আগে জমি ফেরত চান। এজন্য তারা চাপ দিচ্ছিলেন। আমরা মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিতে রাজি নই। এরপর থেকে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
শেখ স্বপন আরও জানান, খামারের নৈশ্য প্রহরীকে যখন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল, তিনি বলছিলেন আমাকে বাঁচান, আমি সব বলতে পারব। তাকে সুস্থ করে তোলা গেলে হয়তো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম জানা যাবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী জানান, নিহত নজরুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী ছিলেন। তিনি বালাপাড়ায় ভেড়ার খামার গড়ে তুলেছিলেন। সেখানেই গতরাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
রোববার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
আর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত খামারের নৈশ্যপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ইতোধ্যে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী, জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল, সৈয়দপুর থানার ওসি শাহজাহান পাশাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ওসি শাহজাহান পাশা জানান, শনিবার রাতের কোনো এক সময় নজরুল ইসলাম দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।
Discussion about this post