কারকনিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মো. মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। শনিবার (১৯ জানুয়ারি) দিনগত মধ্যরাতে গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া রিপন হলি আর্টিজান হামলায় অর্থ সংগ্রহ করেছে বলে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ‘নব্য জেএমবির তিনটি কাজের দায়িত্ব ছিল মামুনুর রশীদের উপর। সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করা এবং অর্থ সংগ্রহ করা। বিভিন্ন জায়গায় হামলার আগে অর্থ সংগ্রহ করার ধারাবাহিকতায় হলি আর্টিজান হামলার পূর্বে ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে, আমিরের হাতে তুলে দেন মামুনুর।’
রবিবার (২০ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য দেন।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ত্রিশালের মতো জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনা করেছিল তারা। ত্রিশালের মতো আরকেটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গিদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল তারা। মূলত হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের। জেএমবির আমির আব্দুর রহমানের মেয়ের জামাই আওয়ালের ভাগ্নে হওয়ায় রিপনে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সংগঠনে।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আসা গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, জেএমবির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিপন। জেএমবির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যাদের ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক নেতা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তামিম ও রিপন ২০১৩ সালের দিকে নব্য জেএমবির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুর্বল জেএমবির পুনর্জন্ম হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমমনা তরুণ ও যুবকদের একত্র করে দলকে গুছিয়ে নেয় তামিম ও রিপন। পরে তামিম নিহত হন আর রিপনকে পলাতক বলছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
তিনি আরও জানান, ‘বিকাশের দোকান লুট করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেটের দোকানে লুট করে ১ লাখ এবং গাইবান্ধা থেকে এক লাখ টাকাসহ মোট আট লাখ টাকা জেএমবির আমির সারোয়ার জাহানের কাছে পৌঁছে দেয় সে। সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে জঙ্গি আব্দুল্লাহর সঙ্গেও পরিচয় হয় তার।’
র্যাবের এই মুখপাত্র মামুনুর রশিদ সম্পর্কে জানান, ‘১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রশিদ। শিক্ষাজীবনের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে হলেও পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস হতে দাওরা-ই- হাদিস সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে বগুড়ায় সাইবারটেক নামক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় ডা: নজরুলের হাত ধরে জঙ্গিবাদে জড়ান রশিদ। তখন তার সাংগঠনিক নাম হয় রিপন ‘
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ তরুণের ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়। নজিরবিহীন ওই হামলা দেশে জঙ্গিবাদের বিপদজনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে।
পরদিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ তরুণ- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো।
আসামিদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে গতবছর ২৬ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান।
Discussion about this post