মাছুদ রানা, বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে ওঠছে ইটভাট। ইটভাটা গুলোতে পাহাড়ি ও সামাজিক বনায়নের কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ফসলি জমি ধবংস করে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসব ইট ভাটায় জ্বালানো হচ্ছে কাঠ। উজাড় হচ্ছে পাহাড়ী বনাঞ্চলের মল্যবান গাছ। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকান্ড ঠেকানোর যেন কেউ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় কাঠ পোড়ানো হলেও দেখছেন না কেউ। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গড়ে ওঠা ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ। সেই সাথে পাহাড় কেটে ইটভাটার জায়গা বড় করছে মালিকপক্ষ। পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়-ফসলী জমি কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেনা ইটভাটার মালিকরা। বনভূমি ধ্বংস করে প্রতিনিয়ত এই কাঠ পোড়ানোর মহোউৎসব চলছে নির্বিঘ্নে।
জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ৮টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে চারটি ইটভাটার কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বাকি চারটির কাগজপত্র বৈধ নয়। কিন্তু এইসকল ইটভাটা গুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে। ফসলী জমি ও ঘন জনবসতি এলাকায় গড়ে তুলেছে ইটভাটা গুলো। এলাকাবাসী এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করলেই তাদের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় প্রভাব থাকার কারনে এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে এই সকল ইটভাট। সেই সাথে পাহাড় কেটে ও বনের গাছ দিয়েই চলছে ইটভাটায় ইট পুড়ানোর কাজ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার গুরুত্বর্পূন সড়ক এর পাশেই ফসলী জমির উপর ও ঘনবসতি এলাকায় গড়ে ওঠেছে ইটভাটা গুলো। উপজেলার বহেড়াতৈল এলাকার মেসার্স সবুজ ব্রিক্স ও মেসার্স পূবালী ব্রিক্স নামের ইটভাটার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লাকরি ও গাছের টুকরো। সেই টুকরো গুলোকে কুড়াল দিয়ে কেটে ভাটায় পুড়ানোর উপযোগী করছে কয়েকজন শ্রমিক। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ন এলাকায় কোন ধরনের ইটভাটা গড়ে তোলার যাবে না বলা থাকলেও সবুজ ব্রিক্স এর পাশেই রয়েছে ঘনবসতি। এই ইটভাটায় নেই কোন পরিবেশের কাগজপত্র। কিন্তু তারপরও নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার কার্যক্রম। এই ইট ভাটার এক অংশ জুড়ে রয়েছে পাহাড় ও বনজ গাছ পালা। যা ধীরে ধীরে ইট ভাটার জায়গায় পরিনত হচ্ছে এবং ইট প্রস্তুতের কাজ চলছে। ইটভাটা থেকে বের হতেই চোখে পড়লো ট্রাক দিয়ে পাহাড়ী ও সামজিক বনায়নের গাছ ও লাকরি ডুকছে ইটভাটায়। ট্রাক চালকের কাছ থেকে জানা যায় সে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন ২৫মন করে কাঠ নিয়ে আসে সবুজ বিক্স ইটভাটায়। অপরদিকে এই ইটভাটার হাফ কিলেমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরেকটি ইট ভাটা। এখানেও চলছে কয়লার বদলে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ানোর কাজ। এ ইটভাটায়ও কয়েকজন শ্রমিক গাছের টুকরো কেটে ভাটায় পুড়ানোর উপযোগী করে তুলছে। আর এ ইটভাটার পাশেই রয়েছে মৌসুম ভিত্তিক কয়েক ফসলি জমি। আর এ ইটভাটার কারনে প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে কৃষকরা। আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক কম ফসল আবাদ হচ্ছে তাদের। অনেকের অভিযোগ আগে যে পরিমান ফল ও ফসল হতো ইটভাটার কারনে এখন আর তা হয় না।
এলাকাবাসী বলেন, আমরা গরীব মানুষ আমাগো সমস্যার তো কারো চোখে পড়ে না। এই ইটভাটার কারনে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমাদের বাড়ি ঘরে ইটভাটার ধুলাবালু, কালো ধোয়ায় বাড়ি ঘর নষ্ট হয়ে যায়। আমারা এর প্রতিবাদ করতে পারি না। প্রতিবাদ করলে আমাদের হুমকি দেয়। প্রশাসনের লোকজনও তো আসে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই এ এলাকায় যেন কোন ইটভাটা না থাকে।
মেসার্স সবুজ ব্রিক্স এর ম্যারেজার জামাল হোসেন বলেন, আমাদের ইটভাটায় কোন সমস্যা নেই। আইন মেনেই আমরা কাজ করছি। এসময় এ প্রতিবেদক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কিভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন এবং কয়লার পরির্বতে কাঠ দিয়ে কেন ইট পুড়ানোর কাজ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে রাগ দেখালেও পরে স্বীকার করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাগজের জন্য আমরা আবেদন দিয়েছি। আর কয়লা ও কাঠ ব্যবহার করেই ইটভাটার কাজ চালাচ্ছি।
এলাকাবাসী হাসমত, আলম, জাহাঙ্গীর, আরিফসহ আরো অনেকেই বলেন, ভাই এরা প্রথমে বনের কিছু জমি দিয়ে ইটের ভাটার কাজ শুরু করলেও পরে জোর করে অনেকের জায়গা দখল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সল্প মূল্যে জমি কিনে নিয়েছে। সেই সাথে বনের গাছ দিয়ে ইটভাটায় ইট পুড়ানোর কাজ করছে। এরা অনেক প্রভাবশালী। এদের বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
মেসার্স সবুজ ব্রিক্স এর মালিক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ভাই আমি দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা চাইলে আমার নামে অনেক কিছুই লিখতে পারেন। আবার আমার অনেক বড় ক্ষতিও করতে পারেন। দয়া করে নিউজটা আগেই কইরেন না। আমি আপনাদের সাথে দেখা করবো।
মেসার্স পূবালী ব্রিক্স এর ম্যানেজার ও তার সহযোগীরা বলেন, আমরা পাবলিক নিয়াই থাকি। আপনারা আসছেন এই নিউজ কইরা কি করবেন। গাড়ি ভাড়ার খরচ নিয়া যান। মালিকরে বইলা আপনাদের তেল খরচ দিয়া দেই। আপনার কি বলেন।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সজীব কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের কাছেও এইসকল ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদেরও হাত বাঁধা। এইসকল অবৈধ ইটভাটার মালিকরা আদালতে রিট ফাইল করে ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এ সুয়োগ কাজে লাগিয়ে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বনভূমি উজাড় করে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ানোর কাজ করছে। আমরা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সেই সাথে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে এই সকল অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিউজ করবেন।
Discussion about this post