মাছুদ রানা, বিশেষ প্রতিবেদক : আলোর ফেরিওয়ালা। অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা দূর করার স্বপ্ন নিয়ে যারা মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত কারার কাজ করে তাদেরকে অনেকেই আলোর ফেরিওয়ালা বলে থাকে। কিন্তু একটি ভ্যানে বিদ্যুৎ সংযোগের সরঞ্জাম, মিটার নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘরছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। তাদের কাজ একটাই, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। এ কারনেই নামকরণ করা হয়েছে আলোর ফেরিওয়ালা। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আলোর ফেরিওয়ালা নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাজির হতে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনদের। এই আলোর ফেরিওয়ালার কারনে নতুন গ্রাহকদের মাত্র ৫ মিনিটেই মিলছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার, নাগরপুর, মির্জাপুর, বাসাইল, ধনবাড়ী ও মধুপুরসহ অনান্য উপজেলায় কয়েকদিন ধরেই চলছে এ বিদ্যুৎ সেবা কার্যক্রম। নতুন গ্রাহকদের হয়রানি, ভোগান্তি, দালাল ও অতিরিক্ত অর্থ খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ গ্রহকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ৫ মিনিটেই পাচ্ছেন এই সেবা। এই আলোর ফেরিয়ালা নামের ভ্যানটিতে রয়েছে বিদ্যুতের মিটার, তারসহ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সব সরঞ্জাম।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দীন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের (জিএম) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রতিটি সমিতি থেকে অন্তত ১০টি করে রিকশাভ্যান নামিয়ে এভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন গ্রাহকদের আবেদনের ভিত্তিতে কোন দালাল কিংবা হয়রানি ছাড়াই জামানতের টাকা, কিছু নিয়ম-কানন ও বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই পাচ্ছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। শুধুমাত্র ১৩০ ফুট সার্ভিস ড্রপের আওতায় সংযোগ প্রদান, দুই কপি ছবি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান, যথাযথ গ্রাউন্ডিং রড ও মিটার বোর্ড দিয়ে ওয়্যারিং নিশ্চিত, ভ্যাটসহ নতুন আবেদন ফি ১১৫ টাকা, নিরাপত্তা জামানত ১কিঃ ওয়াট পর্যন্ত ৪০০টাকা, সদস্য ফি বাবদ ৫০ টাকা এবং হয়রানী ও দালাল মুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করাই এ আলোর ফেরিওয়ালার কাজ। ফলে অতিরিক্ত কোন অর্থ খরচ করার প্রয়োজন পড়ছে না গ্রাহকদের। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ঘরে ঘুরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার লক্ষে এ সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সেবা পেয়ে নতুন গ্রাহকরা অনেক খুশি।
নতুন বিদ্যুৎ গ্রাহক সুরিয়া বেগম, সুজন মিয়া, সাথী বেগম ও সুরিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি। দালালের কারনে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন আমাদের কোন ঝামেলা ছাড়াই সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর মাত্র ৫ মিনিটেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেলাম। এতে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা এতো তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ পেয়ে অনেক খুশি। প্রশানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ আমাদের আলোকিত করেছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আমাদের জন্য সত্যিই আলোর ফেরিওয়ালা।
টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশের পর আমরা একটি ভ্যান প্রস্তুত করেছি। যার নামকরন করা হয়েছে আলোর ফেরিওয়ালা। এ ভ্যানে বিদ্যুৎ সংযোগের সকল সরঞ্জামসহ দুইজন লাইম্যান ও একজন ওয়্যারিং পরিদর্শক রয়েছে। যারা নতুন সংযোগ নিতে আগ্রহী তাদের সকল প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ৫ মিনিটে পাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে করে গ্রাহকদের হয়রানি, ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ খরচ ছাড়াই পাচ্ছেন নতুন বিদ্যুত সংযোগ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, বাসাইল, ধনবাড়ী ও মধুপুরে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। অনান্য উপজেলা গুলোতেও খুব তাড়াতাড়ি এ সেবা চালু করা হবে।
Discussion about this post