টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধলেশ্বরী, ধলেশ্বরী শাখা নদী ও এলেংজানী নদীতে প্রায় ১০ থেকে ১২টি ড্রেজার মেশিন এবং ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বালু খেকোরা। কতিপয় প্রভাবশালী ও নেতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি স্থানে বানিজ্যিকভাবে শুরু করেছে বালু ব্যবসা। এছাড়া বালু ভর্তি ট্রাক ও মহেন্দ্র ট্রাক্টর অবাধে চলাচল করায় কয়েকটি কাঁচা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে প্রতিনিয়ত বালুর ট্রাক চলাচলে ধূলা-বালিতে নদী পাড়ের বসতবাড়ি গুলোতে বসবাস করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, নাগরপুর উপজেলার কেদারপুর সেতুর উভয় পাশে ভেকু ও মহেন্দ্র ট্রাক্টর দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। দিনের বেলায় বালু উত্তোলনের কোন কার্যক্রম না থাকলেও সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের কাজ। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেও কোন লাভ হয় না। এছাড়াও পাকুটিয়া ইউনিয়নের বাথুরা, ধলেশ্বরী লিভার শাখা নদীতেও ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে চালাচ্ছে বালু উত্তোলন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কেদারপুর সেতুর উভয় পাশে ২ থেকে ৩টি মহেন্দ্র ট্রাক্টর নিয়ে বালু উত্তোলন করছে। পাশেই রয়েছে ভেকু মেশিন। দিনের বেলায় ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন না করলেও রাতভর চলে বালু উত্তোলন। এলাকাবাসী জানায় কেদারপুর এলাকার জাফরের ছেলে জহিরুল ও তারসহকর্মীরা প্রতিবছর এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে। এরপরেই ধলেশ্বরী শাখা নদী থেকে স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে সিরাজী নামের এক ব্যক্তি ড্রেজার বসিয়ে চালাচ্ছে বালু উত্তোলন। এখানেই শেষ নয়। পুখুরিয়া এলাকার ধলেশ্বরী লিবাড় শাখা নদীতে ভেকু ও ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে সাবেক নেতা শামীম। এবং তাকে সহযোগিতা করছে রফিক মেম্বার, সেলিম ও রশিদ। এছাড়া পাকুটিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার আরিফ এবং তার সহযোগী মাসুদ, জজ মিয়া ও জিন্নাহ এলেংজানী নদীতে দুটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এরপাশেই ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আরো চারটি ড্রেজার। টেগুরী গ্রামের খালেক ও রাথুরার পীর বজলু বসিয়েছে ২টি ড্রেজার। আর নদীর দুই পাশে বালুর পাড় তৈরি করে তা ট্রাক দিয়ে বিক্রি করছে বজলু ও তার সহযোগীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের কোন নজর নেই এই ড্রেজার ব্যবসায়ীদের উপর। পুলিশ আসে টাকা পায় তারা চলে যায়। কিন্তু ড্রেজার ব্যবসায়ীরা অবাধে নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে থাকে। আমরা গরীব মানুষ আমরা তো আর প্রতিবাদ করতে পারি না। আমাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গেলেও তো কেউ কিছু বলতে পারে না।
ধলেশ্বরী ও এলেংজানী নদী পাড়ের নান্নু, শরীফ, মজনু মিয়া, বকতিয়ার, মরিয়মসহ আরো অনেকেই বলেন, সরকার ড্রেজার অবৈধ ঘোষণা করার পরও কিভাবে বালু খোকোরা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এরা এ কাজ করতে পারছে। আমরা চাই আমাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি যেন ভাঙ্গনের কবলে না পড়ে। কিন্তু এইভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে প্রতি বছর বন্যায় আমাদের সব কিছু ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। আমরা বাড়ি ঘরে ঠিকমত বসবাস করতে পারি না। খাবার পানি পর্যন্ত ঠিকমত খাইতে পারি না। ট্রাক দিয়ে বালু নেয় আর রাস্তার সব ধূলা বালু বাতাসে সাথে বাড়ি ঘরে এসে পড়ে। ভাত খেতে গেলে দরজা জানালা বন্ধ করে খেতে হয়। আমাদের কাপড় চোপড় সব নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
ড্রেজার ব্যবসায়ী আরিফ মেম্বার বলেন, আমি অনেক ক্ষমতাশালী মেম্বার। আমি নদীতে ড্রেজার চালাই এটা আমার ব্যবসা। আর আমি প্রশাসন ও নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করেই চালাই। এটা নিয়ে আপনাদের এতো ভাবতে হবে না।
ড্রেজার ব্যবসায়ী বজলু বলেন, ভাই অনেকেই তো আশে, আপনাদেরও ভালো সম্মানি করবো। আমি একটু ব্যস্থ আছি। আমি তো কাউরে না দিয়ে ব্যবসা করি না। আপনারা আমার সাথে দেখা কইরেন।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সিরাজী বলেন, ভাই আমার এক আত্মীয় ইউএনও। বেশি বুঝলে মামলা করবো। আর আমি ব্যবসা করি তা আপনাদের কি। যে অভিযোগ দেয় তাকে আমার সামনে আসতে বলেন।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। তবে যারা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post