রাত পোহালেই নির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামীকাল রবিবার সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আগামী ৫ বছরের জন্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবে দেশের জনগন। এ উপলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটাররাও প্রস্তুত ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য।
এ অবস্থায় টাঙ্গাইল জেলার ৮টি নির্বাচনী আসনে চলছে সাজ সাজ রব। উৎসব মূখর পরিবেশে ইতিমধ্যে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচার প্রচারণার কাজ শেষ করেছে সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। সকলেই এখন ব্যস্ত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে পোস্টার লাগানো ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ সহ শেষ পর্যায়ের কর্মকান্ডগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার কাজে।
এদিকে ভোটাররাও অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় করছেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য। তবে ভোট যে প্রার্থীকেই দেন না কেন, সকলেরই আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে কেমন হতে পারে তাদের এলাকার নির্বাচনী ফলাফল। আর কেইবা হতে যাচ্ছেন তাদের এলাকার সংসদ সদস্য। এ প্রশ্নকেই সামনে রেখে কারকনিউজ.কম এর পক্ষ থেকে টাঙ্গাইলের আটটি আসনের ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথাবলে নির্বাচনের চালচিত্র তুলে ধরা হলো।
টাঙ্গাইল-০১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) : টাঙ্গাইলের সর্ব উত্তরের দুইটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ১৩০, টাঙ্গাইল-০১ সংসদীয় আসন। এ আসনে মোঠ ভোট কেন্দ্র ১৩৯ টি এবং ভোট কক্ষ থাকছে ৭১৬টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬৪৯৯১ জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৭৯০৪৮ এবং নারী ভোটার হচ্ছে ১৮৫৯৪৩ জন।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মো: আবুল হাসান চৌধুরী জয়লাভ করেন। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের প্রতিটি নির্বাচনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জয়লাভ করে আসছেন। তবে ১৯৯৬ সালের ১২ই ফেব্রয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনে বিএনপির তৎকালীন মহাসিচব ব্যরিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই হিসেবে এটিকে আওয়ামীলীগের দূর্গই বলা যেতে পারে। মূলত: প্রতিটি নির্বাচনেই সঠিক প্রার্থী নির্বাচনে ব্যর্থতার কারনেই কখনোই আওয়ামীলীগের এই আসনে ভাগ বাসতে পারেনি প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপি এমনটাই মনে করেন স্থাণীয় রাজনৈতিক সচেতনরা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক উপর। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এ নেতা তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কারনে এবং দলীয় নেতাকর্মীরাও তার ব্যপারে ঐক্যবদ্ধতার কারনে এবারও নির্বাচিত হবে যাচ্ছেন বলে দাবী করছেন তারই দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে অতীতের যেকোন প্রার্থীর চেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন মধুপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদুল ইসলাম সরকার (সরকার শহীদ) বলে দাবী করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী সরকার শহীদ একজন নিবেদিতপ্রান জননেতা। তার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে নেই কেউ। তাছাড়া তিনি মধুপুর ধনবাড়ীর স্থানীয়, সে হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১৯৯১ সালের পর এবারই প্রথম এই আসনে বিএনপি জয়লাভ করতে পারে।
এদিকে মূল লড়াই আওয়ামীলীগ বিএনপির মধ্যে হলেও এ আসনে নির্বাচনে আরো অংশ নিচ্ছেন মোঃ আবু মিল্লাত হোসেন এনপিপি (আম) মোঃ আশরাফ আলী ইসলামী আন্দোলন (হাত পাখা), ও জাকের পার্টির প্রার্থী মোঃ সালামত হোসাইন খান (গোলাপ ফুল) সহ মোট ৫ জন।
টাঙ্গাইল-০২ (গোপালুপুর-ভূঞাপুর) : মোট ৩৪৮৬৭০ জন ভোটারের সংসদীয় আসন ১৩১, টাঙ্গাইল ০২ ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোঠ ভোট কেন্দ্র ১৩২ টি এবং ভোট কক্ষ থাকছে ৭২৯টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭৫২৩৪৮ এবং নারী ভোটার হচ্ছে ১৭৩৪৩৬ জন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনে তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম পিন্টু জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে। সেই নির্বাচনে সাবেক অর্থ সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামানের নৌকার মার্কার কাছে পরাজিত হন ধানেরশীষের প্রার্থী আব্দুস সালাম পিন্টু। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে আব্দুস সালাম পিন্টু আবারো নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সলের নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসানটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ খন্দকার আসাদুজ্জামান।
তবে এ আসনটি ধরে রাখতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাদের প্রার্থীতা তুলে দিয়েছে তরুন ও উদীয়মান জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছোট মনিরের হাতে। তরুন এ নেতা ইতিমধ্যে এলাকার তরুন প্রজন্মের মাঝে ব্যপক সারা ফেলেছেন। তার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবাল-বৃদ্ধ সকলেই ছোট মনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তারা বলছেন, এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছোট মনির প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতাই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তার নিকটতম প্রার্থীর সাথে ভোটের ব্যবধান হবে বিশাল অংকের।
তবে ছোট মনিরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রার্থী হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত হলেও প্রচার প্রচারনায় সে তুলনায় একটু পিছিয়েই বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় ভোটাররা। আর তার দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কের কারনেই তারা কার অন্তরীন ধানের শীষ প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারনা করতে পারছেন না। সুষ্ঠু ভোট হলে এ আসনে ধানের শীষ প্রার্থীই জয়লাভ করবে বলে তারা আশা করছেন।
এ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ ছাড়াও আরো অংশ নিচ্ছেন জাকের পার্টির এনামুল হক (গোলাপ ফুল), ইসলামী আন্দোলনের এস এম শামসুর রহমান (হাত পাখা), গণফোরামের মনিরুল ইসলাম (উদীয়মান সূর্য্য) ও কমিউনিস্ট পার্টির জাহিদ হোসেন খান (কাস্তে)।
টাঙ্গাইল-০৩ (ঘাটাইল) : টাঙ্গাইল জেলার সবচেয়ে আলোচিত আসন হচ্ছে সংসদীয় আসন ১৩২, ট্ঙাগাইল ০৩ ঘাটাইল আসনটি। কেননা এ আসনের বর্তমান সংসদ শেখ হাসিনার এক সময়ের গুডবুকে থাকার সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা বর্তমানে একটি মামলায় প্রায় দুই বৎসর যাবৎ কারাগারে এবং প্রায় চার বছর যাবাৎ যিনি এলাকায় নেই। তবুও নির্বাচনী তিনি এতটাই জনপ্রিয় যে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর নির্বাচন পূর্ব মাঠ জরিপের প্রতিটিতেই এককভাবেই উঠে এসেছে তার নাম। যেহেতু তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান তাই এ আসনে অর্ধ ডজনেরও বেশী মনোনয়ন প্রত্যাশী সহ সবাইকে অবাক করে দিয়ে এমপি রানার পিতা সাবেক সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দিয়ে যে মুিন্সয়ানা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা তাতে স্থাণীয় আওয়ামী লীগ সহ সাধারণ ভোটাররাও ব্যপক উৎফুল্ল।
সর্বপ্রথম মনোনয়ন সুনিুশ্চত হওয়া সারা বাংলাদেশের ৫টি আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল ০৩ ঘাটাইল একটি। মনোনয়ন প্রাপ্তির পরপরই অপরাপর সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আতাউর রহমান খানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে তার পক্ষে কাজ করে তাকে বিজয়ী করার ঘোষনা দেন। তাছাড়া জনপ্রিয় সাংসাদ আমানুর রহমানের কর্ম, সমর্থক ও অনুসারীরা নির্বাচনী কাজে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে ঝাপিয়ে পড়েন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অপরাপর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিনরাত নিরলসভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটাররাও রানার পিতাকে মনোনয়ন দেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এদিকে এই আসনে নৌকার অন্যটম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ । একই পরিবারের দুই ভাইয়ে নির্বাচনে বেশ প্রতিযোগিতার ভাব ফুটে উঠেছে। তবে শুরুতে বেশ জমজমাট থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি’র তিন ইউপি চেয়ারম্যানের আওয়ামী লীগে যোগদানের ফলে ধানের শীষ এখন অনেকটাই পিছিয়ে। যদিও নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা, নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। বিএনপি নেতা কর্মীরাও একই অভিয়োগ করে বলেছেন, যদি এভাবে আমাদের হয়রানি ও প্রচার কাজে বাধা দেয়া না হয় তাহলে ঘাটাইলে ধানের শীষই জয়লাভ করবে।
এই আসনে নৌকা ও ধানের শীষের পাশাপাশি আরো অংশ নিচ্ছেন এসএম চান মিয়া (আম) এনপিপি, মোঃ আবু হানিফ (ফুলের মালা) তরিকত ফেডারেশন, মোঃ আতাউর রহমান খান (টেলিভিশন) বিএনএফ, মোঃ খলিলুর রহমান (গোলাপ ফুল) জাকের পার্টি, মোঃ রেজাউল করিম ( হাত পাখা) ইসলামী আন্দোলন সহ মোট ৭ জন।
মোট ৩১৮৫৪৬ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১৫৮৭৭৭ ও নারী ভোটার ১৫৯৭৬৯ জনের জন্য ১১৯ টি ভোট কেন্দ্র ও ৬২৫ টি ভোট কক্ষ রয়েছে টাঙ্গাইল ০৩ আসনের জন্য। এই আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা সামসুর রহমান খান সাজাহান কে পরাজিত ব্যপকভাবে আলোচিত হন লুৎফর রহমান খান আজাদ। এরপর ১৯৯৬ সালের ২টি ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে টানা চার বার নির্বাচিত হয়ে ঝাটাইল কে বিএনপির দূর্গে পরিণত করেন। তবে ২০০৮ সালে বিএনপির এই দূর্গে হানা দেয় আওয়ামীলীগ। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডাঃ মতিউর রহমানের নিকট পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। এরপর ডাঃ মতিউর রহমান মৃত্যুবরন করলে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন আমানুর রহমান খান রানা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন আমানুর রহমান খান রানা।
টাঙ্গাইল ০৪ (কালিহাতী) : মোট ৩১১০৮৮ জন ভোটারের সংসদীয় আসন ১৩৩, টাঙ্গাইল ০২ কালিহাতী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোঠ ভোট কেন্দ্র ১০৮ টি এবং ভোট কক্ষ থাকছে ৬০০ টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫৪৯০৫ এবং নারী ভোটার হচ্ছে ১৫৬১৮৩ জন।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় জাসদ প্রার্থী স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাহজাহান সিরাজ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। তবে ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলী প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর নিকট পরাজিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে শাহজাহান সিরাজ পুনরায় আব্দুল লতিফ সিদ্দকঅর বিরুদ্ধে জয়লাভ করে আসনটি নিজের হাতে ফিরিয়ে নেন। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী জয়লাভ করেন। তবে হজ্ব ও তাবলীগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারনে তিনি দল থেকে বহিস্কৃত হয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এ আসনে উপ নির্বাচনে জয়লাভ করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী)।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের শুরতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করলেও অপরাপর রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন চুড়ান্ত হলে ধীরে ধীরে ¤্রয়িমান হতে থাকে ট্রাক মার্কা নিয়ে নির্বাচনে আসা সাবেক মন্ত্রী স্বতস্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দকী। তার সাথে স্থাণীয় আওয়ামীলীগ সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তবে একটি নির্বাচনী প্রচারনার সময় তার গাড়ী লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও অনশন শুরু করেন। এরই এক পর্যায়ে তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এবং এক পর্যায়ে তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। আর এতই নৌকার জয়ের পথ সুগম হয়ে যায় বলে অভিমত স্থাণীয়দের।
যদিও মনোনয়ন না পেয়ে সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দেয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে লড়ছেন মোঃ লিয়াকত আলী। তবে তিনি কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন সে ব্যপারে তার শরীক দলের মাঝেই সংশয় রয়েছে।
এ আসনে আরো নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দীকী (ট্রাক), মির্জা আবু সাঈদ (হাতপাখা) ইসলামী আন্দোলন, মোন্তাজ আলী গোলাপ ফুল) জাকের পার্টি, সাদেক সিদ্দকী (কাঁঠাল) বাংলাদেশ জাতীয় পাটি, সৈয়দ মুস্তাক হোসেন (লাঙ্গল), জাতীয় পার্র্টি
টাঙ্গাইল ০৫ (সদর) : মোট ৩৮০৩৩৮ জন ভোটারের সংসদীয় আসন ১৩৪, টাঙ্গাইল ০৫ টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোঠ ভোট কেন্দ্র ১২৭ টি এবং ভোট কক্ষ থাকছে ৭৬৫ টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮৮৫৭৩ এবং নারী ভোটার হচ্ছে ১৯১৭৬৫ জন।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক স্বরাস্ট্র মন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য ও স্বরাস্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। তবে ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলী প্রার্থী আব্দুল মান্নানের নিকট পরাজিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী মাহমুদুল হাসান পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে এ আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম নির্বাচিত হলেও পরে বিল খেলাপীর মামলায় তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান এবং এ আসনে আদালত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকো মাহমুদুল হাসান কে নির্বাচিত ঘোষনা করে। ২০১৪ সালে এ আসনটি আবাবো আওয়ামী লীগের দখলে আসে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ ছানোয়ার হোসেন জয় লাভ করেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনের আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে একাধিক নাটকীয়তার সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত এখানে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীতে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ ছানোয়ার হোসেন এবং মহা জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির শফিউল্লাহ আল মুনির উভয়েই অংশ নিচ্ছেন।
এ ছাড়াও বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মাহমুদুল হাসান (ধানের শীষ), আবু তাহের (আম) এনপিপি, খন্দকার সানোয়ার হোসেন (হাতপাখা) ইসলামী আন্দোলন, সৈয়দ খালেদ মোস্তফা (নটগাছ) খেলাফত আন্দোলন, শামীম আল মামুন টেলিভিশন) বিএনফ, আবুল কাশেম (সিংহ) স্বতন্ত্র ও মুরাদ সিদ্দকী (মাথাল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন।
যদিও মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯জন তবুও শেষ পর্যন্ত এই আসনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে নৌকা ও ধারে শীষের মধ্যে। এদের মধ্যে আবার টাঙ্গাইলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী অনুযায়ী ঢাকা-টাঙ্গাইল ট্রেন চলাচল শুরু, মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে বর্তমান সাংসদ মোঃ ছানোয়ার হোসেনকেই এগিয়ে রাখছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে লড়াই হলেও ব্যপক প্রচার প্রচারনা সহ সু-সংঠিত নির্বাচনী কর্মান্ডের কারনে মাথাল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া টাঙ্গাইলের সিদ্দিকী পরিবারের মুরাদ সিদ্দিকীর ব্যপারেও আশাবাদী তার কর্মী-সমর্থকরা।
টাঙ্গাইল-০৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) : এ আসনটিতে অংশ নিচ্ছেন মোট আট জন প্রার্থী। তবে প্রচান প্রচারনা ও দলীয় অবস্থানের কারনে এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আছে নৌকা ও ধানের শীষ। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চারটি নির্বাচনেই এখানে ধানের শীষ জয়লাভ করে। তবে ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন খন্দকার আব্দুল বাতেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।
নাগরপুর-দেলদুয়ার উপজেলা নিয়ে গঠিত ১৩৫, টাঙ্গাইল-০৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) নির্বাচনী আসনে পুরুষ ১৯৪০৪১ ও মহিলা ১৯৬৪০৫ জন সহ মোট ভোটার ৩৯০৪৪৬ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্র রঢেছে ১৪১ টি ও ভোট কক্স ৭৬৫টি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল হক টিটু। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কাজ করে এলাকায় আলোচিত হয়েছেন বলে জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়াও সাধারন ভোটারদের মাঝে তার গ্রহনযোগ্যতা ঈর্ষনীয়। তাই তারা নৌকার জয়ের ব্যপারে আশাবাদী।
এ আসনেও রয়েছে মোট ৮ জন প্রার্থী। তবে দড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে। কেননা বিএনপি প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্র্য গৌতম চক্রবর্তীর দলীয় ও ব্যক্তিগত ভোট ব্যংক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির কর্ম ও সমর্থকরা। তারাও নির্বাচনে জয়লাভের ব্যপারে আশাবাদী।
টাঙ্গাইল-০৭ (মির্জাপুর) : এই আসনে মোট প্রার্থী ৬ জন। তবে যথারীতি লড়াইয়ে নৌকা-ধানের শীষ। ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে এ আসনে জয়লাভ করে বিএনপির প্রার্থী আর ২০০১ থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা তিনবার নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের প্রাথী মোঃ একাব্বর হোসেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এ নেতার জয়লাভে ব্যপারে তার কর্মী সমর্থকরা ব্যপকভাবে আশাবাদী। পক্ষান্তরে বিএনপি প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সদ্য কারামুক্ত আবুল কালাম আজাদ সিদ্দকীর কর্মী সমর্থকরা জয়ের আশা প্রকাশ করেন। তবে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যপারে সংশয় প্রকাশ করেন।
টাঙ্গাইল-০৮ (সখীপুর-বাসাইল) : এই আসনে প্রার্থী বদল করেছে আওয়ামী লীগ তারা এখানে মনোনয়ন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম কে।
অপরদিকে ঋন খেলাপী হওয়ার কারনে কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি কাদের সিদ্দকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচন করছে তারই কন্যা ব্যরিস্টার কুড়ি সিদ্দকী। তরুন এ রাজনীতিক এলাকায় বেশ আলোড় সৃষ্টি করলেও জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী হতে পাছেন না শরীক দলের নেতা কর্মীরা। তারা বলছেন কুড়ি সিদ্দকীর জয়লাভের প্রথম শর্ত হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া।
তবে জয়ের ব্যপারে বেশ আশাবাদী নৌকার প্রার্থীর কর্মীরা। তারা বলছেন কুড়ি সিদ্দকী কেন, তার পিতা নিজেও যদি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতেন তবুও নৌকার বিজয়কে আটকাতে পারতেন না। এ আসনে মোট প্রার্থী হচ্ছেন ৫ জন।
Discussion about this post