আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঐক্যফন্টের ভোট বর্জনের’ শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরে যাবো না। এর আগেও বহুবার বলেছি- এবার আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো।’
শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনও দ্বিধা আছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, আমাদের কোনও দ্বিধা নেই।’
লিখিত বক্তব্য ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘রাত পোহালেই ভোট। দেশে এখন উৎসবের আবহ থাকার কথা। কিন্তু মানুষের মনে এখনেও সংশয় সন্দেহ। এ সংশয় দূর করা খুবই জরুরি। আমি ভোটারদের অনুরোধ করবো- আপনারা সকাল সকাল কেন্দ্রে যান। ভোট দিন। আপনারা ভয় পাবেন না। আপনারা ভোট কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে। জনগণের শক্তির সামনে কেউ টিকবে না।’
তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, ‘তরুন সমাজ তোমরা যারা প্রথমবার ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছো তারা সময় মতো ভোট দিতে যাবে। মনে রাখবে ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও, তবেই বাংলাদেশ’।’
প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ যারা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে আছেন আপনারা সম্মানিত মানুষ। আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব তা সততার সঙ্গে পালন করলে আপনাদের সম্মান বাড়বে। ভোটারের মুখের হাসির ওপরই নির্ভর করছে আপনাদের দায়িত্ব পালনের সফলতা ও তৃপ্তি।’
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, টিডিপি, কোস্টগার্ডসহ আইনশশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জড়িতদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ আহ্বায়ক আও বলেন, ‘আপনারা অতীতের মত গৌরবময় ভূমিকা পালন করুন। বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে। সেই প্রশংসার ফলে সারা বিশ্বে আপনাদের সুযোগ বেড়েছে। কোনও অবস্থাতেই যাতে তা ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রিটানিং অফিসার, সহকারী রিটানিং অফিসার আপনারা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন। যদি কারও অধিকার হরণ করেন তাহলে মনে রাখবেন, অন্য কেউ আপনার মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তানের অধিকার হরণ করছে। এটা করলে জনগণ, ইতিহাস, আইন আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বলবো- আপনারা কোনও দলের নয়, আপনারা জনগণের সেবক। জনগণ দেশের মালিক। দেশের মালিকদের তাদের ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন না। কোনও অন্যায় নির্দেশ মানবেন না।’
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘প্রবাসী ভাই ও বোনেরা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য যারা ভোট দিতে পারবেন না, আপনারা আপনাদের স্বজনদের ভোট দিতে যেতে বলুন। তারা যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে সেই আনন্দের অংশীদার আপনারাও হবেন।’
লিখিত বক্তব্যে সবশেষে তিনি সারা দেশের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন আমরা ভোট দিই। আপনার ভোট খুবই মূল্যবান। কেননা আপনি দেশের মালিক।’
এসময় নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তো আমাদের নেত্রী না। উনি কি বললেন না বলেন সেটা আমাদের বিবেচনায় নেয়ার বিষয় না।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষ ভয় পেলে বেপরোয়া হয়ে উঠে। সরকার ভয় পেয়েছে। যে কারণে তারা বিরোধীদলের ওপর হামলা নির্যাতন করছে, গুন্ডামি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের উৎসবে আমাদের ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী চার্চে গিয়েছিলেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। সেখানেও পুলিশ ও সরকারের গুন্ডাবাহিনী হামলা চালিয়েছে, গুন্ডামি করেছে। কি অসভ্য সমাজে বাস করলে পরিস্থিতি এমন হয় যে, মানুষ মসজিদ, চার্চ ও মন্দিরে শুভেচ্ছা জানতে যেতেও পারবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।
Discussion about this post