নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গতকাল ছিল সবচেয়ে ভায়োলেন্ট দিন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের টেক্কা দিয়ে পুলিশই সন্ত্রাসী আক্রমণে প্রাধান্যে থেকেছে। দেশের বিভিন্ন ধানের ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচারণা ও সমাবেশে সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে গতকাল। আমরা ভেবেছিলাম সেনাবাহিনী নামার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটি হয়নি, তবে আমরা এখনও আশাবাদী।’
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গতকাল ছিল বিএনপি প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। হামলা করে গুলি করে বিএনপি প্রার্থীদের রক্তাক্ত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদের গাড়িতে ভয়ংকর হামলা করা হয়েছে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কিশোরগঞ্জে ধানের শীষর প্রার্থী মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান ও শরীফুল আলমের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তাদের শরীরে পরিধেয় রক্তে ভিজে গেছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ অপুর প্রচারণায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত ও মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তার অবস্থা গুরুতর। শেরপুরে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকার ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। বরিশালে সরদার সারফুদ্দিন আহমেদ সান্টু হামলায় আহত হয়েছেন। এছাড়াও গতকাল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল আজিম, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব, আজহারুল ইসলাম মান্নান ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। সন্ত্রাসীরা গোটা এলাকা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘ভোটে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে কাজ করার জন্য ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রচুর নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি অপারেশনাল ইউনিটে নগদ অর্থ পৌঁছানো হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য ব্যাপক টাকা ছড়ানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটের ময়দান ফাঁকা করতেই ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চলছে। সারা দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যারা মানুষকে নিরাপত্তা দিবে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই মানুষকে নিরাপত্তাহীন করে তুলছে। সারা দেশে এখন ভয়ংকর আতংকের নাম পুলিশ-র্যাব-বিজিবি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন সিইসিসহ কতিপয় কমিশনার।’
‘চুয়াডাঙ্গায় সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেলের গাড়িতে বোমা হামলাকারি গুলিবিদ্ধ যুবক খালিদুজ্জামান টিটু (২০) ছাত্রলীগ নেতা। অথচ ঐ ঘটনায় মামলা করা হলো চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহবায়ক ওহিদুল আলম বিশ্বাসকে। তাকেসহ অনেক নেতাকর্মীকে ধানের শীষের প্রার্থী শরিফের বাসায় আটকে রাখা হলো।’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘একাদশ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট মারতে দলে দলে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈয়মুর আলম খন্দকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post