কারকনিউজ ডেস্ক : চারিদিকে ঘন কুয়াশা। এরই মধ্যে লোকজনের কোলাহল। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ খেজুর গাছ। আশপাশের এলাকা ও শহর থেকে খেজুরের রস খেতে এসেছে লোকজন। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় আবার কেউ পায়ে হেঁটে খেজুরের রস খেতে এসেছেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি ও পাইক মুড়িল এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। রসের এমন চাহিদায় বেশ ফুরফুরে সময় কাটছে টাঙ্গাইলের গাছিদের।
অপরদিকে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। গত কয়েক বছর আগেও বাড়ির আঙ্গিনা, জমির আইল ও রাস্তার দুই পাশে দেখা যেতো অসংখ্য খেজুর গাছ। তবে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।
শীত মৌসুমের আগমন হতে না হতেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের গাছিরা।
গাছিরা জানান, রস সংগ্রহে শীতের আগমনের শুরু থেকেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন গাছিরা। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের এখন অনেক কদর। শীত জেঁকে বসায় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তবে গাছ সংকটের কারণে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না, বলছেন তারা।
পাইক মুড়িল এলাকার গাছি নুরুল ইসলাম বলেন, বছরে সাড়ে তিন থেকে সর্বোচ্চ চার মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি রস ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিদিন অনেক দূর দুরান্ত থেকে লোকজন রস খেতে আসেন। রস সংগ্রহ করতে অনেক পরিশ্রমও করতে হয়। কয়েকদিন পর পর গাছ কাটতে হয় আবার শুকাতে হয়।
তিনি বললেন, রসের চাহিদা খুব বেশি। অনেকেই শীতের মধ্যে কষ্ট করে এসেও রস না পেয়ে চলে যান।
চারাবাড়ি এলাকার গাছি আশরাফ আলী বলেন, আমার এখানে রাস্তার পাশে ৩৯টি খেজুর গাছ আছে। তার মধ্যে ২ গাছ থেকে রস বের হয় না। ৩৭টি গাছের প্রতি গাছে ৫ থেকে ৬ কেজির মতো রস বের হয়। অনেকেই মোবাইলে আগে থেকে রসের অর্ডার দিয়ে রাখেন, আবার অনেকেই রস না পেয়ে রস সংগ্রহের বোতল রেখে যায়। পরের দিন এসে রস নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, রাত জেগে রস পাহারা দিতে হয়। পাহারা না দিলে এলাকার যুবকরা এসে হাড়িসহ রস নিয়ে যায়। কুয়াশা যেদিন বেশি পড়ে সেদিন রসও বেশি বের হয়।
রস খেতে আসা সুমন মিয়া বলেন, রস খেতে খুব ভোরে ৮ কিলোমিটার দূরের এনায়েতপুর এলাকা থেকে এসেছি। তারপরও রস পাইনি। অন্য একজনে রস কিনে বাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছ থেকে এক গ্লাস খেয়েছি।
রস খেতে আসা মনির হোসেন বলেন, রস খাওয়ার জন্য রাতে ফোন করেছিলাম। আসতে একটু দেরি হওয়ায় রস পাইনি। গাছির কাছে বোতল রেখে গেলাম কাল এসে রস নিয়ে যাবো।
রাকিব মিয়া বলেন, সকালের মিষ্টি রোদে খেজুর রস খেয়েছি। খুব ভাল লাগলো। গাছির মোবাইল নম্বর নিয়েছি, আসার আগে তাকে ফোন করে অবগত করবো।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কৃষি অফিসার জিয়াউর রহমান বলেন, খেজুর গাছ রোপণ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
Discussion about this post