নারীর গোপন সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিসিয়া ওয়াকার। ‘প্রতারক স্ত্রীর গোপন জীবন’ নামে তিনি একটি বইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছেন। বইটিতে তিনি বলেছেন, যেসব নারী স্বামীকে ভালোবাসেন আর বিবাহিত সম্পর্কও অটুট রাখতে চান, তারাই বেশিরভাগ স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন।
একটি ম্যারিড ডেটিং সাইটের ওপর গবেষণার অনুরোধ এলে তিনি বিভিন্ন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। এক বছর ধরে ওয়াকার ২৪ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৫০ জন নারীর সাক্ষাৎ নেন। গবেষণায় উঠে আসে, যেসব নারী স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন, তারা বিবাহ নামক সম্পত্তিটি হাতছাড়া করতে চান না, তারা শুধু যৌনতা ও পুলক খোঁজেন অন্যের কাছে!
অধ্যাপক ওয়াকার তার গবেষণা সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি সানকে বলেন, অর্ধেকের বেশি নারী তাকে বলেছেন, তারা যৌনতাবিহীন বিবাহ সম্পর্কে আছেন অথবা তারা পুলকবোধ করেন না এবং সেজন্যই স্বামীর সঙ্গে এ অবিশ্বস্ততা।
ওয়াকারের প্রশ্ন ছিল, কেন মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন?
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনি জানতে পারেন, বয়স চল্লিশের আগেই মূলত বেশিরভাগ নারী অবিশ্বস্ত হন।
যারা স্বামীকে ভালোবাসি বলেন, অথচ তার সঙ্গে প্রতারণা করেন; তাদের মনোজগৎ উন্মুক্ত করতেই ওয়াকার গবেষণা করেন। দেখেন, ওই বয়সে তারা নতুন সঙ্গী খুঁজতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, আর তাই গোপন প্রণয় সারেন। তিনি দেখেন, বেশিরভাগ নারীর কাছে এ আচরণ স্বতঃস্ফূর্ত পছন্দ নয়, এক ধরনের প্রয়োজনীয়তা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে প্রায় সবাই বলেছেন, ‘আমি অনেক বছর বিবাহিত সম্পর্কে আছি, তাই, হয় আমাকে প্রতারণার মাধ্যমে অন্য কারো কাছ থেকে পুলক নিতে হবে, নয়তো আমাকে স্বামী ছাড়তে হবে।’
এলিসিয়া ওয়াকার বলেন, এটা খুবই হিসাবী সিদ্ধান্ত, যা তারা বৈবাহিক জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছেন, চরম পুলক তার মধ্যে একটি; এবং তারা সত্যিই বিবাহিত অবস্থায় প্রতারণা করছেন, যা বিস্ময়কর।
গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের একজন ৪৫ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল। তিনি তার বিবাহিত জীবনের বেদনাদায়ক অধ্যায়গুলো জানান অধ্যাপক ওয়াকারকে। বলেন, ‘আমি হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে অনেক কেঁদেছি। পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয় প্রতারণা করব, নয় পালাব।’
অনেক নারীই বলেছেন, অসুস্থতার কারণে তাদের স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। কিন্তু তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করা জরুরি এবং তাঁরা তাদের বিবাহিত জীবনও ধ্বংস করতে চান না। আর এ জন্য তারা প্রতারণাকে খারাপভাবে দেখছেন না। তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে আছেন, যারা যেকোনো সম্পর্কে থেকেই প্রতারণা করেন। নতুনত্ব সন্ধানী তারা।
তবে দুজনের সম্পর্ক যে শুধু শারীরিক তা মানতে নারাজ কেউ কেউ। তারা বিবাহিত সম্পর্ক ছেড়ে দিয়ে অন্য সঙ্গী খুঁজতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে যুগলের ভেতর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মূল্যও অনেক। তাই ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে প্রতারণা করতে চান না তারা।
তবে এটা বিস্ময়কর, বেশিরভাগ নারীর সঙ্গে কথা বলে অধ্যাপক ওয়াকার এ সিদ্ধান্তে এসেছেন, পুলক-প্রয়োজনীয়তাই তাদের ‘ভালো স্ত্রী’ ও ‘ভালো মা’ করে তুলছে। আর সবচেয়ে যেটার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, তা বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষাও করছে!
Discussion about this post