টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচনী মাঠে না থাকায় নৌকার পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। ফলে ট্রাক প্রতীকের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ধস নামছে। আর ঐক্যফ্রণ্টের ধানের শীষ কৃষক শ্রমিক জনতালীগের গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর ( রোববার ) নির্বাচনী প্রচারণাকালে কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল-বল্লভবাড়ি এলাকায় লতিফ সিদ্দিকীর গাড়ি বহরে সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা হামলার পর তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অনশন করায় ট্রাক প্রতীকের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। টানা তিন তিন আমরণ অনশনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমএসএসইউ) হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে এলাকায় থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা ‘লতিফ সিদ্দিকী ঢাকা চলে গেছেন, আর আসবেন না’ বলে প্রচার চালান। ওই প্রচারের সাথে লতিফ সিদ্দিকীর অনুগত চার চেয়ারম্যান সহ ৭ জনকে আওয়ামীলীগ থেকে সাময়িক বহিস্কারের চিঠি দেয়া হয়। এতে লতিফ সিদ্দিকীর অনুগত স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বহিস্কার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তারা একে একে সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী হাছান ইমাম খানের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন, নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন। ফলে গত দুই দিনে নৌকার পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ট্রাক প্রতীকের প্রচারণা পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে, এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতালীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. লিয়াকত আলীর ধানের শীষ প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা চালালেও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি। পোস্টারে ধানের শীষের প্রতীক থাকলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছবি না থাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো. লিয়াকত আলী তাঁর দল কৃষক শ্রমিক জনতালীগের নেতাকর্মীদের অলিখিত বেষ্টনী থেকে বেড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আত্মজ হতে পারেন নি। ফলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছেন।
উল্লেখ্য, আওয়ামীলীগে থাকাকালে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ২০১৪ সালে ধর্মীয় বিষয়ে নিউইয়র্কে একটি সভায় বেফাঁস বক্তৃতা দেয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে আসনটি শূন্য হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে হাসান ইমাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পরও তৃণমূলে তাঁর(লতিফ সিদ্দিকীর) গ্রহনযোগ্যতা কমেনি। উপ-নির্বাচনে হাছান ইমাম খান বিজয়ী হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাথে নানা বিষয় নিয়ে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
Discussion about this post