কারকনিউজ ডেস্ক : আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার ধান কাটা ও ঘরে তোলা এবং খড় শুকানো (গো খাদ্য) নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে কালিহাতী উপজেলার কৃষকরা। বেশিরভাগ ক্ষেতে বোরো ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। এখন সময় ধান ঘরে তোলার। উপজেলায় ধানের ফলন মোটামুটি ভালো হলেও শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি ও মন প্রতি ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
এদিকে এবার বৈশাখের শুরু থেকেই হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকার ধান বৃষ্টি শুরুর আগেই গোলায় উঠলেও কিছু স্থানে এখনো বাকি রয়েছে। ধান কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুমের শেষের দিকে অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে কালিহাতী উপজেলার বেশকিছু এলাকার কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছে। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে গন্ধ হয়ে গেছে ধান। এদিকে বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও। বৃষ্টিতে উপজেলার বেশিরভাগ ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। তাই ধান কেটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। দিন-রাত পরিশ্রম করে কৃষকেরা সোনালী বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। সে ধান ঘরে তুলতে গিয়ে বৃষ্টির পানি যেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। বলতে গেলে বোরো ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে এবং গো খাদ্য (খড়) শুকাতেও এক প্রকার নাজেহাল হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের পাছজোয়াইড় গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে ইরি ধান আবাদ করেছিলেন। তার মধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ। এই ২০ শতাংশ জমির ধান কাটতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ ক্ষেতে পানি ছিল। এমনকি শুকনাতে ধান কাটতে জনপ্রতি কামলার দাম ছিল ৬০০ টাকা। আর ক্ষেতে পানি থাকায় জনপ্রতি ৮০০ টাকা করে কামলা নিয়ে আমার ধান কাটতে হয়েছে। অন্যান্য বছর পঞ্চগড়ের কামলা ছিল। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে সেখান থেকে কামলা আসতে পারে নাই। তাই দেশি কামলা দিয়ে ধান কাটছি। ধান কেটেও বিপদে পড়েছি। বৃষ্টির কারণে ধান এবং খড় শুকাতে না পারায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের বাগুটিয়া উত্তর পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, আমি এক পাকি জমিতে প্রতিবছর ইরি ২৯ ধান আবাদ করি। গত বছর এই সময়ে শুকনাতে ধান কাটছিলাম। অসময়ে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে এবার ধান প্রায় তলিয়ে গেছে। একটু জেগে আছে। জেলার বাইরের কামলা পাওয়া যায় না। দেশী কামলা কম। যাও আছে তাও আবার তারা পানিতে নামতে চায় না। যাও আবার পানিতে নেমে ধান কাটতে চায়, দাম চায় ৮ শত টাকা করে। এক কামলায় কত আর ধান কাটবো? যার কারণে বেকায়দায় পড়ে নিজের ধান কষ্ট হলেও নিজে একাই কাটতেছি। আবার যাও কাটতাছি তাও শুকানো যায় না, শুকানো ঝামেলা। এই বৃষ্টিতে রোদ নাই শুকামু কেমনে? ধান না কাটলে মাইনষে খারাপ কবো, যে পাকা ধান কাটে না। এখন করমুডা কি? এ কারণে আস্তে আস্তে নিজেই কাটতেছি, অহন যে কয়দিন লাগে।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার বলেন, করোনা পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ দু’টো আমাদের হাতে নেই। তারপরেও কালিহাতী উপজেলায় ৯০% বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। বিশেষ করে যে সমস্ত জাতগুলো আগাম ছিল সেগুলো কেটে কৃষক ঘরে তুলতে পারছে। এখন ১০% ধান মাঠে আছে। এগুলো মূলত লেট ভ্যারাইটি। আমরা পরবর্তীতে যেটা করবো সেটা হলো আমরা কৃষকদের উৎসাহ করবো যাতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী এগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার যে আমাদের আগাম জাতগুলো আছে ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ৮৬ এগুলো জাতের ধান চাষ করলে এটা একটা উপায়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রমিক সঙ্কটের যে বিষয়টি রয়েছে, সেটি কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি কারো শ্রমিক প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের কাছে ডিমান্ড চাইলে অথবা অন্য জেলা হতে শ্রমিক আমদানি করতে হয় সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সমন্বয় করে আনার ব্যবস্থা আছে। অসময়ে বৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। লক্ষ্যমাত্রা ঠিকই অর্জিত হয়েছে।
Discussion about this post