কারকনিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা /সীমিত করে, সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ ১৫টি নির্দেশনা জারি করে ১৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত আরেকদফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে।
এরমধ্যে ২১ মে শবে কদরের সরকারি ছুটি, ২২ মে, ২৩, ২৯ ও ৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৪, ২৫ ও ২৬ মে ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি যুক্ত হবে।
১৫ নির্দেশনার মধ্যে এবারের সাধারণ ছুটিতে নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। ওই সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। মহাসড়কে মালবাহী, জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবহান ছাড়া অন্যান্যগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ১. সাধারণ ছুটি/ চলাচলে নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলা এবং এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন/আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয় বিক্রয়, ওষুধ, চিকিৎসাসেবা, মৃতদের দাফন/সৎকার) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না।
২. এ ছুটি/চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকরা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
৩. রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখার স্বার্থে দোকান পাট খোলা রাখা যাবে। তবে ক্রয় বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। বড় বড় শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ারসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪. শপিংমলে আসা যানবাহনকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। দোকান পাট এবং শপিংমলগুলো আবশ্যই বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
৫. সাধারণ ছুটিতে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলো (স্থলবন্দর, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাক সেবা, সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এ ছুটির বাইরে থাকবেন।
৬. সড়ক ও নৌপথে সব প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন, (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে।
৭. কৃষি পণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
৮. চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, কর্মী, এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়েজিত কর্মীরা সাধারণ ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবেন।
৯. ওষুধ শিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু করতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে শিল্প কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো পর্যায়ক্রমে উম্মুক্ত করা হবে।
১১. সাধারণ ছুটিতে নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।
১২. রমজান ঈদ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বিবেচনায় ব্যংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
১৩. সব মন্ত্রণালয় /বিভাগ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসসমুহ প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখবে। সেই সঙ্গে তারা তাদের অধিক্ষেত্রের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং আওতাধীন অফিসগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারিকরা ১৩দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
১৪. সাধারণ ছুটিতে নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। ওই সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। মহাসড়কে মালবাহী, জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবহান ছাড়া অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
১৫. আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও বর্তমান বিদ্যমান বিধি বিধান প্রযোজ্য হবে। উম্মুক্ত স্থানে বড় কোনো জমায়েত পরিহার করতে হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪টা এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপর ৪ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল, পরে তা বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল করা হয়। চতুর্থদফা ১৪ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পঞ্চমদফা ছুটি বাড়ানো হয় ৫ মে পর্যন্ত। পরে সেটি বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। এ ছুটি চলমান অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
Discussion about this post