পাবনা সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত দুইজনের মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) দুপরে শহরে বিক্ষোভ করে তারা। এসময় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খানের ফাঁসি চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তারা। বিক্ষোভকারীরা হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে দুপরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিহত লস্কর খান ও আব্দুল মালেকের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। মরদেহ দাফন শেষে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নিহত দুইজনের মরদেহ নিতে ভাড়ারা এলাকা থেকে কয়েক হাজার নারী পুরুষ পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভীড় করে। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাসপাতাল চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে নিহত লষ্কর খানের ছেলে সুলতান আহমেদের নিকট মরদেহ দুটি হস্তান্তর করে। মরদেহ নিয়ে কড়া পুলিশি প্রহরায় গ্রামে ফেরার পথে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভকারীরা হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দাবি করে আবু সাইদ খানের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করে সুলতান আহমেদ বলেন, ‘আগামী তিনদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা না হলে পুরো পাবনা শহর অবরোধ করে অচল করে দেয়া হবে।’
নিহত লস্কর খানের পুত্র সুলতান খান আরও বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে আবু সাইদ খানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় সে। এরই জেরে আমাকে হত্যার উদ্দেশে সোমবার সন্ধায় আবু সাইদ খান সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাদের বাড়ির ওপর হামলা করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আমার বাবা ও চাচাকে হত্যা করেছে। ইতিপূর্বেও ২০১৬ সালে আমার ও আমার লোকজনের বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় আবু সাইদ। অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। দলের নাম ভাঙিয়ে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তেলনসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যে সে বা তার লোকজন করেন না। আমি আবু সাইদ খানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ঘটনার বিষয়ে ভাড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বলেন, ‘সোমবারের ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুলতানের সাথে আমার কোন পূর্ব বিরোধ নেই। শত্রুতা বশত সুলতান এই ঘটনার সাথে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ইউপি নির্বাচনে হেরে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। সুলতান আওয়ামী লীগের কেউ নয়, তার পরিবার জামায়াত-বিএনপির এজেন্ট এবং সে জাসদ করতো।’
পাবনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, ‘সুলতান আহমেদ দুই বছর পূর্বে আওয়ামীলীগের যোগ দিয়েছেন। তবে এই ঘটনা রাজনৈতিক নয়। ব্যাক্তিগত বিরোধের কারণে হয়েছে। আমরাও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করি।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) জালাল উদ্দিন বলেন, সোমবার সন্ধ্যার সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্য়ন্ত থানা মামলা দায়ের হয় নাই। ওই এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যায় পাবনা সদরের ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ খয়ের বাগান এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আরঙ্গবাদ খয়েরবাগান গ্রামের মৃত জাহেদ আলী শেখের ছেলে আব্দুল মালেক ও মৃত গহের আলী খানের ছেলে লষ্কর আলী খান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।
Discussion about this post