আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ। বুধবার (২৮ নভেম্বর) সারা দেশে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দপ্তরে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। এ ছাড়া কেউ চাইলে এ সময়ের মধ্যে তার মনোনয়নপত্র অনলাইনের মাধ্যমেও জমা দিতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালন করতে হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনও ধরনের শোডাউন করা যাবে না।
ইসি’র পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় সাত জনের বেশি লোক রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় করতে পারবেন না। প্রার্থীদের পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে। রিটার্নিং অফিসারের অনুকূলে এই টাকা জমা দিতে হবে। প্রার্থীরা ইউনিয়নভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি প্রতিটি ৫শ’ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করতে পারবেন।
আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন সামনে রেখে কোনও প্রার্থী জনসভা, মিছিল, মিটিং করতে পারবেন না। কেবল পথসভা করতে পারবেন। প্রার্থীদের পোস্টার হতে হবে সাদাকালো। প্রতিটি পোস্টারের নিচে পোস্টারের সংখ্যা, প্রেসের ঠিকানা, প্রকাশকের নাম দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ বিধি মানা না হলে সেসব পোস্টার নির্বাচন কমিশনের কাছে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। পোস্টারের সাইজ হতে হবে সর্বোচ্চ ২৩ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চি।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার ছাড়া কাউকে পোলিং এজেন্ট করা যাবে না। নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগে পোলিং এজেন্টদের দুই কপি ছবি এবং নামের তালিকা রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামা আকারে আটটি তথ্য দিতে হবে। ব্যয়ের উৎসের বিবরণী, আয়কর রিটার্নের কপি জমা দিতে হবে। মনোনয়ন ফরমে কোনও ভুল হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। তাই সম্ভাব্য প্রার্থীকে সতর্কতার সঙ্গে মনোনয়নপত্র পূরণ করতে হবে। মনোনয়ন দাখিলের আগে প্রার্থীকে অবশ্যই যে কোনও তফসিলি ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলতে হবে। নির্বাচনের সমুদয় ব্যয় এ অ্যাকাউন্ট থেকেই করতে হবে। এই অ্যাকাউন্টের নম্বর, ব্যাংক ও শাখার নাম মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং অফিসার এবং কমিশনে জমা দিতে হবে। এছাড়া, ব্যক্তিগত খরচের হিসাব ফল প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে।
কোনও প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। লিখিত ছাড়া কোনও এজেন্টের অভিযোগ কমিশন আমলে নেবে না। কোনও ভোটার ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে না ফেলে বাইরে নিয়ে এলে কমিশন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া, অন্য কোননোভাবে কোনও ব্যালট পেপার বাইরে চলে এলে ওই ব্যালট পেপার যে প্রদর্শন করবেন, কমিশন তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবে।
ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচনি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনি এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন এবং ব্যাটালিয়ান আনসার মোতায়েন করা হবে। তারা মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। নির্বাচনি অপরাধগুলো বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হবে। বিচারিকণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবেন। ভোটের দিন নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ব্যতিত কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।
Discussion about this post