পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এমন কোন ঘটনা এর আগে ঘটেনি যা টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে। সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পরও পর পর তিনটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত। নিয়ম বর্হিভূতভাবে গত ১৪ নভেম্বর ওয়েব প্রোগ্রামিং, ১৯ নভেম্বর ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং এবং ২৫ নভেম্বর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিপূর্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কৃত ৪২ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়নি প্রশাসন।
জানা যায়, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় ইয়াসিন আরাফাতসহ ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্লাস-পরীক্ষা, ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইয়াসিনের জন্য তিন দফায় পেছানো হয় আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষা। গত ৩১ অক্টোবর সাইবার ক্রাইম, ৫ নভেম্বর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ১০ নভেম্বরের ওয়েব প্রোগ্রামিং পরীক্ষা পেছানো হয়। তবে ৬ নভেম্বর আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টারের সকল শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।
এছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা হলে পুনরায় সকল শিক্ষক একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করবে এমন আল্টিমেটাম দেয়ার সময়সীমা পার হলেও কোনো সিদ্ধান্তই পাননি শিক্ষক সমিতি। এ কারণে গত ১৫ নভেম্বর ইয়াসিনকে পরীক্ষা দেয়া বা না দেয়ার বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এবং আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বদরুল আলম মিয়ার বাকবিতর্কের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন বদরুল আলম।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ বদরুল আলম মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আইসিটি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ১ম সেমিস্টার ফাইনালের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সে সকল বিষয়ের উপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি পেলেও তার অংশগ্রহণ এ পরীক্ষার কোনো মূল্যায়ন করা হবে না। তদন্তে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে পরবর্তীতে এ পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন জানান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ইয়াসিন আরাফাতসহ ৫ ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে শিক্ষকদের নেয়া পদত্যাগ প্রত্যাহার করানোসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করে। তবে বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীদের একজন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাতকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবগত করা হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালায় অনুসারে বহিষ্কৃত কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইয়াসিন আরাফাত সাময়িক বহিষ্কারের বিরুদ্ধে হাইকোট থেকে আগের একটি আবেদন পত্র নিয়ে এসেছে। তার কাছে সে কাগজ আছে। আর বর্তমানে রাজনৈতিক বিভিন্ন চাপ রয়েছে সব মিলিয়েই তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি প্রমানিত হয় সে জড়িত তবে তার এ পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে।
Discussion about this post