যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসেই এক ধরনের হুলুস্থূল ফেলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসীদের জন্য মার্কিন দুয়ার এক ধরনের বন্ধই করে দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। তিনি কী করতে যাচ্ছেন, কেমন হবে আগামী পৃথিবী এ নিয়ে বিশ্লেষণের অন্ত নেই।
অভিবাসীদের জন্য ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করায় বহু দেশ তার (ট্রাম্প) কড়া সমালোচনা করে। সেই সঙ্গে নিন্দা জানায়। তবুও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেননি। তবে এবার ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প। যদিও সেটা সাময়িক।
বুধবার (২১ নভেম্বর) সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল বিচারক জন এস টাইগার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে যেখান থেকে আসুক, যে ভাবে আসুক আমেরিকায় আশ্রয় চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। সোজা ভাষায় এভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিবাসন আইনের রদবদলে সাময়িক ধাক্কা দিলেন ফেডারেল বিচারক।
আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্ত থেকে বেআইনি ভাবে শত শত মানুষ এ দেশে ঢুকতে চাইলেও গত ৯ নভেম্বর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, বৈধ কাগজ ছাড়া কাউকে আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তার সেই নির্দেশনামা অনুযায়ী, কেউ অবৈধভাবে আমেরিকায় ঢুকে আশ্রয় চাইলেও পাবেন না। মধ্য আমেরিকা থেকে মেক্সিকো দিয়ে যে হাজার হাজার শরণার্থীর ক্যারাভান আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বলে নির্দেশনামায় জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ফেডারেল বিচারকের এমন সিদ্ধান্তে ফের কোণঠাসা ট্রাম্প। বিচারক বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারে থাকুক বা না থাকুক, নতুন একটা শর্ত চাপিয়ে তিনি অভিবাসন আইন সংস্কার করতে পারেন না। বিশেষত যাতে মার্কিন কংগ্রেসেরও সায় নেই।’ এর পরেই বিচারকের সংযোজন, এই নয়া নিয়ম কার্যকর হলে সীমান্তে হিংসা ও অন্য ধরনের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন শরণার্থীরা। বিচারকের নয়া নির্দেশের জেরে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্পের নির্দেশনামা আর খাটছে না। ওই দিন ফের শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মার্কিন সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন একে নিজেদের জয় হিসেবে দেখছে। সংস্থার প্রতিনিধি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের নিষেধ বেআইনি। অসংখ্য জীবনকে বিপন্ন করা। কারও আশ্রয় চাওয়ার অধিকার এভাবে সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।’
বিচারকের আজকের সিদ্ধান্তের পরে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে ঠিকই। কিন্তু কর্নেল ল স্কুলের অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষক স্টিফেন ইয়েলোয়ার বলেছেন, সেই ক্ষমতার আবার সীমাও রয়েছে। তার কথায়, ‘ট্রাম্প প্রশাসন যে রকম এককভাবে অভিবাসন আইন পাল্টে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল, সেই প্রচেষ্টায় বিচারকের নয়া নির্দেশ অবশ্যই বড় ধাক্কা দিল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি হয়তো যাবে সুপ্রিম কোর্টেই।’
মার্কিন অভিবাসন আইন অনুযায়ী, আমেরিকার মাটিতে কোনও বিদেশি পা রাখলে তিনি আশ্রয়ের জন্য আবেদন জানাতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফেরত পাঠাতে পারে না প্রশাসন। অ্যাসাইলাম অফিসারের সঙ্গে তাকে ইন্টারভিউয়ে বসতে হয়। শরণার্থীর সংখ্যা বিপুল হওয়ায় অধিকাংশকেই পরবর্তী হাজিরার দিন বলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরেই পরিবারসহ ২৩ হাজার ১২১ জন শরণার্থীকে সীমান্তে আটক করা হয়।
Discussion about this post