পারিবারিক বিরোধের জেরে সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে দিয়ে মেয়ে জরিনা খাতুনকে (৪৫) হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন মামলার বাদী ও নিহত জরিনার মেয়ের জামাই রোজিনার স্বামী নূর ইসলাম।
হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা (মামলা নম্বর-৩৫, ১০/১১/২০১৮ ধারা- ৩০২/৩০১/৩৪ দণ্ড বিধি) দায়ের করেছিলেন নূর ইসলাম। ঘটনার এক সপ্তাহ পর বাসটি (ঢাকা মেট্রো জ-১১-১৭৯২) জব্দ এবং তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া চালক-হেলপারসহ চারজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
শনিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি হেডকোয়ার্টারে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।
মামলাটি প্রথমে আশুলিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করে। চাঞ্চল্যকর মামলা হওয়ায় পরবর্তী সময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আদেশে পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আশুলিয়ার গাজীরচর এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে ও নিহত জরিনার মেয়ের জামাই নূর ইসলাম (২৯), নূরের মা আমেনা বেগম(৪৮) ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার করোয়াজানি গ্রামের মোকছেদ আলীর ছেলে মো. স্বপন (৩৫)।
ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে করা ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে জরিনাকে বাসে তুলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য বাসচালকের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করেছিলেন নূর।’
পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, ‘জরিনা সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার খাস কাওলিয়া গ্রামের মহির মোল্লার স্ত্রী। তিনি নিজের বাবা আকবরকে নিয়ে আশুলিয়ায় জামাতা নূরের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জে ফেরার জন্য আশুলিয়ার ইউনিক এলাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে ওঠেন আকবর ও জরিনা।’
তিনি জানান, ‘চালক ও অপর সহযোগীরা বাসটি আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় আকবরকে মারধর করে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে আশুলিয়া ব্রিজের কাছে মরাগাঙের কাছে ফেলে দেয়। এরপর জরিনাকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেয়া হয়।’
ডিআইজি বনজ জানান, ‘জরিনার শরীরে কোনো ক্ষত না থাকলেও তার গলায় কালো দাগ ছিল। শ্বাশুড়িকে খুনের পর জামাতা নূর নিজেই অজ্ঞাতদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।’
যে কারণে হত্যা করা হয় জরিনাকেঃ সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বনজ কুমার জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে স্বপন ছিলেন জরিনার মেয়ে রোজিনা ও নূর ইসলামের বিয়ের ঘটক। তার মধ্যস্ততায় ৫ বছর আগে এই বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। আর এই বিবাদ মেটাতে রোজিনার মা জরিনা প্রায়ই আশুলিয়ায় জামাই নূর ইসলামের বাড়ি আসতেন। সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য কলহ প্রকট আকার ধারণ করে এবং এজন্য শাশুড়ি জরিনাকে দায়ী করা হয়। নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগম ঘটক স্বপনের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন। পরে তারা পরিকল্পনা করে শাশুড়ি জরিনাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যেন সে আর তাদের বাড়িতে না আসেন।
পরে ঘটক স্বপন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি ভিন্ন রুটের গাড়ি ঠিক করেন। সাধারণত সেসব গাড়ির নির্দিষ্ট রুট নেই, যখন যে দিকে যাত্রী পায়, সে দিকে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নূর ইসলাম শাশুড়ি জরিনা ও নানা শ্বশুর আকবর আলীকে ওই বাসে তুলে দেন। বাসে দুজন হেলপার একজন সুপারভাইজার ও চালক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এরপর চুক্তি অনুযায়ী হেলপার ও সুপারভাইজাররা মিলে আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেন। জরিনাকে হত্যা করে আরেকটু দূরে গিয়ে ফেলে দেয়।
গত শুক্রবার ( ৯ নভেম্বর) আশুলিয়ায় চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে দিয়ে মেয়ে জরিনা খাতুনকে হত্যা করে পালিয়ে যায় চালক ও তার সহযোগীরা।
Discussion about this post